Social Icons

Saturday, July 9, 2016

হারিয়ে গেছে সেই ঈদ-তিন যুগের ব্যবধানে

সেই ঈদ আর খুঁজে পাই না তিন যুগের ব্যবধানে। আনন্দ নেই চাঁদ দেখার সেই আনন্দ- যা বিজ্ঞানের কল্যাণে বিলীন হয়ে গেছে। মনে আছে রমজানের শুরুতেই ঈদের জন্য বাবার কাছে নতুন জামার বায়না ধরা আর নতুন জামার অপেক্ষায় কেটে যেত পুরো রমজান মাস। বাজি ধরে ওই বয়সে রোজা রাখতাম। বাবা-মা রোজা ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতো। পরে সেহেরীর সময় ঘুম ভাঙ্গাতো না- যা পরের দিন অভিমান করে সেহেরী না খেয়ে রোজা রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতাম। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর পেটের মাঝে রাক্ষসগুলো ছোটাছুটি করতো। সহপাটিদের মাঝে সকাল-বিকাল হিসেব চলতো এবারের ঈদের জন্য এ পর্যন্ত কে কত টাকা জমা করেছে। মামা-মামি, নানা-নানি, খালা-খালু, ফুফা-ফুফু, কিংবা দুলাভাই-আপু’র কাছ থেকে কে কত হাতিয়ে নিয়েছে এ হিসেব চলতো প্রতিদিন। কারো বাড়িতে এমন আত্মীয়রা আসার খবর মানেই ঈদ ব্যাংকে টাকা জমা হবে নিশ্চিত। এমন নানা চিন্তা ভাবনার মাঝে ঈদের ৪-৫ দিন আগে বাবা নিয়ে আসতো ঈদের নতুন জামা ও জুতো। 
 
ঈদের চাঁদ দেখার জন্য গ্রামের ২০-৩০ জন মিলে ছুটে যেতাম ধান ক্ষেতের খোলা আকাশে। পশ্চিম আকাশে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হতো চাঁদ। হঠাৎ কারো মুখে চিৎকার ভেসে উঠতো ঐ যে চাঁদ! সেই আনন্দের ভাষা বর্ণনা করা দুষ্কর। বিজ্ঞানের কল্যাণে সেই আনন্দ এখন আর পাইনা। চাঁদ রাতে সমবয়সীরা ঘুমাতে যেতে চাইতাম না। শুধু গ্রামের এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে ঘুরে গজল গেয়ে বেড়াতাম। গজল গেয়ে অর্জিত আয় মসজিতের চট কিংবা ওজু করার জন্য মাটির ঘটি কিনে দেয়ার আনন্দ মনে থাকবেই। চাঁদের রাতে সবার ঘরে ঘরে রান্নার ধুম পড়ে যেত। কার বাড়িতে কি রান্না হচ্ছে এ আলোচনা চলতো সহপাটিদের মাঝে। ওই রাতে বেশ কয়েকবার চুপি চুপি ঘরে গিয়ে নতুন জামা-জুতো দেখে আসতাম। কেউ জামার রং জানতে চাইলেই বলতাম কাল ময়দানে দেখিও। রেডিওতে চলতো নজরুলের সেই বিখ্যাত গানটি ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এখনও ওই গান না বাজলে যেন কোথাও ঈদের আমেজ সৃষ্টি হয় না। ঈদের সকালে সাবান দিয়ে গোসল করার ধুম পরে যেত পুকুর ঘাটে। সে সময় লাক্স সাবানের পাশাপাশি কেউ কসকো, লাইফবয় সাবান ঈদের জন্য ব্যবহার করতো। হাতে বেশি সাবান দিয়ে ঘষতাম না কারণ গতরাতে লাগানো মেহেদির রং যেন ফ্যাকাশে না হয়। বড়দের চেয়ে একটু বেশি মেহেদির জন্য কত কান্না-কাটি করেছি। এরপর দুয়ারে পাটি বিছিয়ে ঈদের সাজ নিতাম বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। এ সময় মা নিয়ে আসতো সদ্য রান্না করা সেমাই। খাবার দিয়ে যেতে যেতে সাবধান করে দিতো দেখিস নতুন কাপরে যেন দাগ না লাগে। কিন্ত ঈদের আনন্দ যেখানে উতলে উঠেছে সেখানে দু চামুচ সেমাই পেটে চালান দিলেই মিটে যেত খিদে। ময়দানে গিয়ে সহপাটিরা একে অপরকে প্রশ্ন করতো জামা-জুতো কত নিয়েছিস, কত টাকা জমা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আজ আর হাজার হাজার টাকা খরচ করে দামি জামা-জুতো কিনে ঈদের ওই আনন্দ পাই না। অত্যাধুনিক যন্ত্রের বদৌলতে আজ আর রেডিওতে শুনতে পাই না ‘রেডিও বাংলাদেশ’ ঈদ মোবারক। 
 
আজ ঈদের চাঁদ দেখা না গেলেও কাল  উদযাপিত  হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। হারিয়ে গেছে ঈদের সেই আনন্দ। গ্রামে গিয়ে এবারো ঈদ করবো। কিন্তু ঈদের আনন্দের সাথী আমার মাকে এবার পাবো না। ঈদের সকালে বাড়ির পাশেই ফকিরগঞ্জ হাটে একটু বেড়াতে যেতাম আর সেখান থেকে আসতে দেরি হলে মায়ের সেই মধুর শাসনের বুলি জীবনভর কোন ঈদে বাস্তবে আর না পেলেও মনের কোঠায় মায়ের ওই শাসন বাক্য মনে থাকবে চিরকাল।

No comments:

Post a Comment

 

Welcome here!!!


Dont miss a post!!

Thanks for visiting!!


 
Blogger Templates